\
দেশি মুরগির- জীব নিরাপত্তা (Bio Security)
জীব নিরাপত্তা (Bio Security) শব্দটি বর্তমান খামার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে বহুল আলোচিত। জীব নিরাপত্তা শব্দের অভিধানিক অর্থ হলো জীবের নিরাপত্তা বিধান করা। অর্থাৎ খামার স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে খামার পরিচালনা, উৎপাদন, উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ, এমনকি ভোক্তার কাছে উৎপাদিত পণ্য পৌঁছে দেযা পর্যন্ত প্রক্রিয়াগুলোর আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থাপনা । সার্বিক অর্থে রোগ জীবানু ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের প্রভাব থেকে খামার রক্ষাই জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জীব নিরাপত্তা সহজ অর্থ হচ্ছে এমন কিছু ব্যবস্থাপনা যাতে জীবানু বাহির থেকে খামারে প্রবেশ করতে না পারে এবং একই ভাবে খামার থেকে জীবানু বাহিরে যেতে না পারে।
জীব নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তাঃ
রোগ প্রতিরোধের সব চাইতে সহজ ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে জীব নিরাপত্তা। জীব নিরাপত্তা বসতবাড়ীতে, পোল্ট্রি খামারে, গবাদিপ্রাণি, ছাগল ও ভোড়ার খামারে রোগ জীবানু প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।
জীব নিরাপত্তা রোগের ঝুঁকি কমায়, চিকিৎসা, ঔষধ, ধকল, ডাক্তার খরচ কমিয়ে সার্বিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
রোগের চক্রঃ
যদি এই চক্র ভাঙ্গা যায় তবেই যে কোন রোগ জীবানুকে প্রতিরোধ সম্ভব। জীব নিরাপত্তা হলো একটি সাধারণ জ্ঞান এটি মূলত কিছু আদর্শগত আচরণবিধি, যা কোন খামারে অবশ্যই পালন করা যায়। প্রাণিসম্পদকে ক্ষতিকর জীবানুর সংস্পর্শে আসা থেকে দুরে রাখার একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনাই হলো জীব নিরাপত্তা।
জীব নিরাপত্তার উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপঃ
- বহিরাগত রোগ জীবানু যেমন রানীক্ষেত, গামবোরো, ক্ষুরারোগ , ম্যাসষ্টাইটস ইত্যাদির কবল থেকে খামারকে রক্ষা করা।
- মানুষ বা অন্যান্য জীবজন্তুর মাধ্যমে ছড়ায় এমন রোগ ও জীবানু থেকে খামারকে রক্ষা করা।
· রোগের বিস্তার সীমিতকরণের মাধ্যমে সার্বিক ক্ষতি হ্রাস করে লাভজনক উপায়ে খামার গড়ে তোলা।
· খামারের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা।
· স্বাস্থ্য সম্মত নিরাপদ ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করাঃ
· জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োগ করে জীবানু ও এন্টিবায়োটিকমুক্ত উৎপাদিত পণ্য রপ্তানী করে বিশ্ব বাজারে ইতিবাচক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
·
জীব নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণঃ
মানুষের অসচেতনতা
· প্রতিবেশী খামার / খামারকর্মী/ দর্শনার্থী।
· খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
· যানবাহন, খাদ্য/ পানি
· পোশা ও বণ্য প্রাণী এবং পাখি
· রোগাক্রান্ত প্রাণী, মুরগীর বিষ্ঠা, ডিম, লিটার।
· মৃত প্রাণীর দেহ সঠিকবাবে মাটির নীচে পুঁতে না ফেলা।
খামারে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করণীয়ঃ
Ø অসুস্থ্য গবাদিপ্রাণি, হাঁস-মুরগী ছিল বা আছে এমন জায়গা থেকে আসা যে কেউ, তার পরনের কাপড়, জুতা বা স্যান্ডেলের মাধ্যমে রোগ জীবানু বয়ে আনতে পারে।
Ø প্রতিবেশী বাড়ী বা স্থানীয় বাজার অথবা যে কোন আক্রান্ত এলাকা থেকে আসা শিশুসহ পরিবারের যে কোন সদস্য।
Ø গবাদিপ্রাণী, হাঁস-মুরগী ও পণ্য বিক্রয়ের মধ্যস্থতাকারী বা ছোট ব্যবসায়ী যারা খামারে হাঁস-মুরগী অন্যান্য জীবজন্তু বা অন্যান্য কৃষি জাত পণ্য বেঁচতে বা কিনতে আসে।
Ø খামারে টিকা বা পরামর্শ সেবা দিতে আসা মাঠকর্মী, এনজিও কর্মী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুব মহিলা এমন হতে পারে যে তারা এখানে আসার আগে একটি সংক্রমিত খামারে গিয়েছিলেন।
Ø কুকুর, বিড়াল, শেয়াল বা অন্যান্য প্রাণী যারা অন্য জায়গা থেকে মৃত জন্তু টেনে আনতে পারে।
Ø সার হিসেবে কেনা বা অন্য কাজে ব্যবহারের জন্য অন্য খামার থেকে আনা লিটার বা মুরগির বিষ্ঠা।
খামার পরিদর্শক ও অন্যান্য লোকদের জন্য করণীয়ঃ
খামার পরিদর্শক (প্রাণিসম্পদ কর্মী অথবা ভেটেরিনারী ডাক্তার) কে পোষাক বদলিয়ে উত্তমরূপে জীবানুনাশক স্প্রে করে খামারে প্রবেশ করতে দিতে হবে। পরিদর্শকের জন্য আলাদা রেজিষ্ট্রার খাতা ব্যবহার করতে হবে, যেখানে তাঁর বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করা তাকবে।
খামার কর্মীদের জন্য করণীয়ঃ
প্রত্যেক কর্মচারীকে জীব নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাদেরকে এ বিষয়ে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খামারে প্রবেশের পূর্বে কর্মচারীদের গোসল করে নিতে হবে। প্রত্যেক কর্মচারীর জন্য আলাদা রং এর পোষাক রাখতে হবে যাবে প্রত্যেকের নাম লেখা থাকবে।
খামারে যানবাহন্ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও যন্ত্রপাতির বিষয়ে করনীয়ঃ
খামারের বাইরের কোন পরিবহনকে (খাদ্য, বাচ্চা, ডিম, দুধ) খামারের বেড়ার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
যানবহনের চালক, কর্মীকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত নয়।
খামারের যন্ত্রপাতি, দুধের পাত্র, ডিমের ট্রে, প্রভৃতি ভালবাবে ঘষে পরিষ্কার করে সাবান পানি দিয়ে ধূয়ে তারপর জীবানুনাশকে চুবিয়ে রোদে শুকিয়ে কামারে প্রবেশ করাতে হবে।
জীব নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য ড্রেস বা পোষাকঃ
আদর্শ পোষাক
- মাস্ক ২. পস্নাষ্টিকের হাত মোজা বা গেস্নাবস ৩. এপ্রোন ৪. পায়জামা ৫. কান ঢাকা টুপি ৬. গামবুট
মধ্যম মানের জীব নিরাপত্তা পোষাকঃ
১.গামছা তিন ভাজ করে নাকে বাধা ২. লম্বা হাতা পাঞ্জাবী ৩. টুপি ৪.পস্নাষ্টিকের জুতা
নূন্যতম মানের জীব নিরাপত্তা পোষাকঃ
অন্তঃত পক্ষে খামারে যে পোষাক ও জুতা ব্যবহার করা হয়, তা খামারের ভিতরের ভিতরেই পরিধান করতে হবে। এ পোষাক খামারের বাইরে ব্যবহার করা যাবে না। খালি পায়ে এবং খালি গায়ে খামারে প্রবেশ করা যাবে না।
খামারে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয়ঃ
খামারের চারদিকে কাঁটা তার, বাঁশ অথবা নেট দিয়ে বেড়া দিতে হবে যাতে করে শিয়াল, কুকুর, বিড়াল অথবা অন্য কোন বণ্য প্রাণি খামারে প্রবেশ করতেনা পারে। খামারের প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড টানাতে হবে।
কোনক্রমেই অন্য খামারের জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবে না। খামারের জিনিসপত্র, যন্ত্রপাতি, ডিমের ট্রে, দুধের পাতে পরিচিতি চিহ্ন রাখা উচিৎ যাতে অন্য খামারের সাথে বদল না হয়।
জীবানুনাশক ব্যবহার করার অন্ততঃ ১৫-২০ মিনিট পর যন্ত্রপাতি জিনিসপত্র ভিতরে প্রবেশ করাতে দিতে হবে।
খামারের বাইরে চলাচলের নিয়মঃ
বিনা প্রয়োজনে খামারীর গবাদিপ্রাণি বা মুরগীর বাজার বা প্রতিবেশী খামারে যাওয়া উচিত নয়। কারণ বাজারের হাঁস-মুরগী, গবাদিপ্রাণি বিভিন্ন স্থান ও কামার থেকে আসে। ফলে অজানা উৎস থেকে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিশেষ প্রয়োজনে বাজারে গেলে বাড়ীতে ফেরার পর জুতা, কাপড়, সাবান পানি দ্বারা ধুয়ে দিন এবং নিজে গোসল করুন।
খামারকর্মী কিভাবে কাজ করবেনঃ
খামার ঘরের বাইরে অবশ্যই সাবান পানি এবং ফুটবাথের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ফুটবাথের জীবানুনাশক অবশ্যই প্রস্ত্ততকারক কোম্ পানীর নির্দেশমত গুলাতে হবে এবং সঠিক সময় পর পরিবর্তন করতে হবে। পোশাক বদল, জুতা বদল, ফুটবাথের ব্যবহার প্রভৃতি সঠিকভাবে করতে হবে।
যদি একই খামারে একের অধিক শেড তাকে, তবে প্রত্যেক শেডের জন্য আলাদা, পোষাক, জুতা, যন্ত্রপাতি রাখতে হবে এবং এদের রং ভিন্ন হওয়া ভাল।
পোল্ট্রি ও গবাদিপ্রানির ঘর য াযবাবে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার এবং ময়লা আবর্জনামুক্ত করে তারপর জীবানুনাশক স্প্রে করতে হবে।
খামারের আশপাম প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
উচিছষ্ট খাবার , লিটার , বিষ্ঠা ও অন্যান্য আবর্জনা প্রতিদিন সরিয়ে ফেলতে হবে। সেগুরো কম্পোষ্ট করার জন্য সংরক্ষিত জায়গায় রাখতে হবে।
খামারের উৎপাদিত পণ্য ডিম, দুধ এবং মুরগি বিক্রিয় ক্ষেত্রে করণীয়ঃ
দুধ, ডিম বা মুরগীর বিক্রির পর খামারে পুনরায় প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই কাপড় ধুয়ে গোসল করে খামারের নির্দিষ্ট ড্রেস পড়ে জীবানুনাশক যথাযথবাবে ব্যবহার করে খামারে ঢুকতে হবে।
যে ভ্যান বা বাহন দিয়ে মুরগি, ডিম বা দুধ নিয়ে যাবেন বাল করে সাবান পানি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে পরে জীবানুনাশক স্প্রে করতে হবে। কখনোই অবিক্রিত গবাদিপ্রাণি বা মুরগির বাজার হতে খামারে সরাসরি ফিরিয়ে আনা যাবে না।
খামার নিয়মিত পরিষ্কার করণ
খামারের যন্ত্রপাতি নিয়মিত পরিষ্কার করণঃ
জীবানুনাশক (Disinfectant)ঃ
জীবানুনামক কি? যে সমস্ত কেমিক্যাল রোগ জীবানুকে দ্বংস করে অথবা মেরে ফেলে তাদেরকে জীবানুনাশত (Disinfectant) বলে।
জীবানুনামকের প্রকারভেত।ঃ জীবানুনাশক প্রধানত ৬ প্রকার । যেমনঃ
1. অক্সিডাইজিং এজেন্ট, ৪ . ফেনলিক এজেন্ট
2. এলডিহাই কম্পাউন্ড ৫. কোয়াটারনারি এমোনিয়া এলকাইড
3. এলকোহলিক এজেন্ট ৬.অন্যান্য ক্সার জাতীয়
বাজারে প্রচলিত জীবানুনাশকের পরিচিতিঃ
1. ক্লোরিন জাতীয় জীবানুনাশক যেমন-ব্লিচিং পাইডার
2. অক্সিডাইজিং এজেন্ট যেমন-পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানাইট, সাবঅক্সিমনোসালফেট, ডাইক্লোরা আইমোসায়নিউরেট
3. সোডিয়াম হাইপ্রোক্লোরাইড জাতীয় জীবানুনাশক-যেমন-ক্লোরটেন।
4. আইয়োডিন জাতীয় জীবানুনাশক যেমন পভিসেফ।
5. গ্লুটারাল ডিহাই জাতীয় জীবানুনাশক যেমন টিএইচ-৪।
6. ডাইসোফার জাতীয় জীবানুনাশক যেমন ফার্ম-৩০।
7. ফেনলিন যেমন ডিটল।
8. এলকোহল-আইসোপ্রোপাইনল।
জীবানুনাশক ব্যবহারের কতিপয় নির্দেশনাঃ
জীবানুনাশক ব্রবহারের পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
1. ট্রেড নামঃ কোম্পানী যে নামে বাজারজাত করে
2. জেনেরিক নাম প্রকৃত নাম (অ্যাকটিভ ইনগ্রোডিয়্যান্ট)
3. প্রস্ত্ততের তারিখ
4. মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ
5. ব্যাচ নং
6. জীবানুনাশক অবশ্যই প্যাকেট জাত/ কোতল বন্ধী হতে হবে
7. জীবানুনাশক অবশ্যই প্রস্ত্ততকারক কোম্পানীর মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে
8. একই জীবানুনাশক বার বার ব্যবহার করা যাবে না এতে করে জীবানু সহনীয় হয়ে যেতে পারে এবং
9. জীবানুনা্রশক শিশু ও গবাদিপ্রানির নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
জীবানুনাশকের ব্যবহার বিধিঃ
1. খাবার পানি শোধনে ব্যবহারযোগ্যঃ ক্লোরো হাইপোক্লারাইড জাতীয় জীবানুনাশক
2. আইয়োডোফোর/ আয়োডিন জাতীয় জীবানুনাশক গবাদিপ্রাণি বা পোল্ট্রির কোন ক্ষতি করেনা সকল জায়গায় বাল কাজ করে তবে রোদে এর কার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যায়।
3. গ্লুরালডিহাইইড, ফেনল, ডাইপটাvাসয়াম পারঅক্সিডাইসালফেট জাতীয় জীবানুনাশক মুরগীর শরীরে ব্যবহার করা যায় না। তবে দেয়াল, ছাদ, ফ্লোর, পানি, খাদ্য ও যন্ত্রপাতি জীবানুমুক্ত করতে খুবই কার্যকরী।
4. জীবানুনাশক পানিতে গুলানোর পর এর কার্যকারিতা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকে। জীবানুনাশক ব্যবহার করার পর এর কাজ করার জন্য সাধারণত ৩০ মিনিট সময় লাগে অর্থাৎ একটি খাবার পাত্র জীবানুনাশক দিয়ে স্প্রে করার পর অন্তত ৩০ মিনিট পরে কামার ঘরে ঢুকাতে হবে যাতে করে জীবানু দ্বংস করতে সময় পায়।
5. ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংসকারী জীবানুনাশক অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রাতেই বেশী কার্যকরী। সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দ্রবণ-১ ভাগ সোডিয়াম হাইপোকেত্লারাইড ১০ ভাগ পানির সাথে মিশিয়ে ৮০ লিটার জীবানুনাশক তৈরী করা যায়। গবাদিপ্রাণির ঘর, মেঝে, চালা, পোল্ট্রির শেড জীবানুমুক্তকরণে এ দ্রবণ খুবই কার্যকরী। বাজারে ক্লোরক্স/ ক্লোরটেক নামে ইহা পাওয়া যায়।
ফিউমিগেশন পদ্ধতিঃ
ব্রয়রারের জন্য প্রতি ১০০ বর্গফুট স্থানের জন্য ২০ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাংগানেট + ৪০ মিঃ লিঃ ফরমালডিহাইড অর্থাৎ ১ঃ২ অনুপাতে ব্যবহার করতে হবে। লেয়ারের জন্য প্র তি ১০০ বর্গফুট স্তানের জন্য ৩০ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাংগানেট + ৬০ মিঃ লিঃ ফরমাঅর্থাৎ ১ঃ২ অনুপাতে ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতিঃ
প্রথমে মুরগীর ঘরের আয়তন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পটাশ ও ফরমালহিাইডের পরিমাণ হিসাব করতে হবে। তারপর ঘরের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে রক্ষিত পাত্রে ফরমালডিহাইইড রেখে নির্দিষ্ট দূরত্বে সাজাতে হবে। এরপর এক দিক থেকে পটাসিয়াম পারম্যাংগানেট পাত্রে ঢেলে ঘর থেকে বের হয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। ২৪ ঘন্টা এবাবে তাকার পর দরজা খুলে দিতে হবে।
জীবানুনাশক ব্যবহারের পর নির্দেশনাঃ
জীবানুনাশক ব্যবহারের পর নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে
- জীবানুনাশক ব্যবহার করা হলো তা রেকর্ড রাখতে হবে
- ব্যবহারের পর প্যাকেট বা বোতলের মুখ বন্ধ রাখতে হবে
- জীবানুনাশক শুল্ক ও ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে
- ব্যবহার শেষ হলে প্যাকেট বা বোতলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
খাবারের বর্জ নিস্কাশনঃ
- বর্জ পদার্থ যেকানে সেখানে ফেলা যাবে যাবে না।
- কুকুর, বিড়াল, বন্যা প্রাণি, পাখি, কাজ যাতে বর্জ খেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- সরাসরি জমিতে সার হি সাবে ব্যবহার করা যাবে না।
- মাছের ভাদ্য হিসাবে সরাসরি পুকুরে ব্যবহার করা যাবে না।
ময়লা আবর্জনা নিস্কাশনঃ
- মাটি চাপা দেয়া-নির্দিষ্ট জায়গায় অন্তত ৩ ফুট নীচু বস্তাবন্দী করে মাটি চাপা দিতে হবে।
- পঁচানো-২ ভাগ লতাপাতা+১ ভাগ বর্জ গর্তের মধ্যে পলিথিন বিছিয়ে ৭ দিন রাখতে হবে। ৭ দিন পর উল্টিয়ে পুনরায় ৭ দিন রাখতে হবে। এভাবে পঁচানো বর্জ সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
বানিজ্যিক খামারের বায়োসিকিউরিটি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রামত্ম জরুরী করণীয়ঃ
বানিজ্যিক পোল্ট্রি খামারের জন্য বায়োসিকিউরিটি রোগ প্রতিরোধ ও সুষ্ঠু উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখে। তাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক সম্প্রতি বায়োসিকিউরিটি বিষযক যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে তা সকল বানিজ্যিক খামরীদেরকে অনুসরন করতে হবে।
১.î খামারের জন্য স্থান নির্বাচন / খামারের অবস্থানঃ
১. একটি খামার থেকে অন্য খামারের ন্যূনতম দুরত্ব থাকবে কমপক্ষে - ২০০ মিটার
২. একটি পারিবারিক খামার থেকে বানিজ্যিক খামারের ন্যূনতম দরত্ব হবে - ২০০ মিটার
৩. প্রক্রিয়াজাত কারাখানা থেকে বানিজ্যিক খামারের ন্যূনতম দুরত্ হবে - ০১ কি:মি:
৪. জীবন্ত মুরগির বাজার থেকে খামারের ন্যূনতম দুরত - ০১ কি :মি:
৫. লোকালয় থেকে খামারের ন্যূনতম দুরত্ব - ৫০০ মিটার
৬. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থান থেকে খামারের ন্যূনতম দুরত কমপক্ষে - ০১ কিমি:
৭. জলাশয় থেকে খামারের দুরত্ব - ২০০ মিটার
৮. নদী থেকে খামারের ন্যূনতম দুরত্ব - ০১ কিমি:
৯. মুরগির কাঁচা বিষ্ঠা সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এমন জমি থেকে খামারের দুরত্ব - ২০০ মিটার
১০. খামারের বেষ্টনি থেকে শেডের ন্যূনতম দুরত্ব - ০২ মিটার
১১. বড় গাছ থেকে খামারের দুরত্ব - ১০০ মিটার
১২. গোসলখানা ও পায়খানা থেকে শেডের ন্যূনতম দুরত্ব - ১০ মিটার
২. î খামারের বৈশিষ্টঃ
১. খামারের চারপাশে অবশ্যই ২(দুই) মিটার উঁচু নিরাপদ বেষ্টনি থাকবে
২. শেডের জন্য অবশ্যই এমন দরজা থাকতে হবে যা বন্ধ করা যায়
৩. খামারে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য একটি মাত্র গেট/ দরজা থাকবে
৪. দরজায় সবসময় প্রহরী / বন্ধ থাকতে হবে
৫. খামারে প্রবেশ ও বের হওয়ার দরজায় অবশ্যই ‘‘প্রবেশ সংরক্ষিত’’/ প্রবেশ নিষেধ লেখা থাকবে
৬. শেডের দরজা সবসময় বন্ধ থাকবে
৭. কম বয়সী মুরগির শেড বাতাস প্রবাহের উল্টা দিকে থাকবে
৮. দুইটি শেডের মধ্যে ন্যূনতম দুরত্ব হবে শেডের প্রশত্বতার দ্বিগুন
৯. শেডগুলোতে পাখি প্রতিরোধক জাল থাকবে
১০. একই খামারে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালন করা যাবে না
১১. একই শেডে বিভিন্ন বয়সের পাখি পালন করা যাবে না
১২. খামারে অপরিশো ধিত / দুষিত পানি সরবরাহ করা যাবে না
১৩. মৃত মুরগি অপসারনের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে
১৪. খামারের বর্জ্য অপসারনের নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে
৩. îযাতায়াতঃ
১. খামারের ভিতরে ব্যবহৃত যানবাহন বাইরে ব্যবহার করা যাবে না
২. এক খামারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম অন্য খামারে ধার দেওয়া বা ব্যবহার করা যাবে না
৩. খামারে প্রবেশের জন্য দর্শকের তালিকা করে পোশাক পরিবর্তন করে ও শরীর জীবানুমুক্ত করে প্রবেশ করাতে হবে
৪. দর্শনার্থী দুটি খামার দেখলে কমপক্ষে মাঝখানে সময়ের ব্যধান থাকতে হবে ২৪ ঘন্টা
৫. যানবাহন খামারে প্রবেশের আগে জীবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে ও জীবানুনাশকযুক্ত চৌবাচ্চার ভিতর দিয়ে ঢুকবে যাতে চাকা জীবানুমুক্ত হয়ে যায়
৬. যানবাহনকে শেডের নিকট আনা যাবে না কমপক্ষে শেড থেকে ৩০ মিটার দুরে রাখতে হবে
৭. যানবাহনের চালক শেডে ঢুকবে না
৮. একজন কর্মী একাধিক শেডে কাজ করবে না , যদি কখনো অন্য শেডে যেতে হয় তবে কাপড় পরিবর্তন ও গোসল করে ঢুকতে হবে
৯. খামার কর্মী , ব্যবস্থাপক ও ভেটেরিনারীয়ান ছাড়া কোন ব্যক্তি শেডে ঢুকবে না
১০. অন্য কাজে নিয়োজিত শ্রমিক কখনোই শেডে ঢুকবে না
১১. এক খামারের কর্মী ও ব্যবস্থাপক অন্য খামারে যাবে না ও কোনভাবেই শেডে ঢুকবে না
১২. খামার কর্মী ও ব্যবস্থাপক জীবন্ত মুরগির বাজার , ডিম ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র , ঔষধের দোকান ও অন্য যেকোন প্রক্রিয়াকরণ কারখানা পরিদর্শন করতে পারবে না।
১৩. বিভিন্ন বয়সী মুরগি পালনের ক্ষেত্রে প্রথমে কম বয়সী ও পরে বেশি বয়সী মুরগির পরিচর্যা করতে হবে।
১৪. কর্মী ও ব্যবস্থাপক কোথায়ও বাইরে কোন কাজে গেলে পোশাক পরিবর্তন ও গোসল করে শেডে ঢুকবে।
৪.î কীটপতঙ্গ ও অন্যান্য পাখি নিয়ন্ত্রনঃ
১. খামারকে ইঁদুরমুক্ত রাখার ব্যবস্থা থাকতে হবে
২. প্রতিনিয়ত শেড ও আশাপাশ পরীক্ষা করে দেখতে হবে যেন কোন ইঁদুর বা অন্যান্য কীটপতঙ্গ ও পাখি প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি না হয়
৩. ইঁদুরের গর্ত বন্ধ করতে হবে ও ইঁদুরের পায়খানা পরিষ্কার করতে হবে
৪. ময়লা আবর্জনা শেড থেকে কমপক্ষে ৩০ মিটার দুরে ফেলতে হবে
৫. শেডের চারপাশের ঘাস ও আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে
৬. ইঁদুর অন্যান্য কীটপতঙ্গ ও পাখির মৃত দেহ দ্রুত অপসারন করতে হবে । মৃত পাখি দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে। সরানোর আগে মৃত পাখিকে কীটপতঙ্গমুক্ত পাত্রে রাখতে হবে।
৭. খাবার পাত্রের আশপাশ থেকে দ্রুত পরিত্যক্ত খাবার নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
৮. শেডের মেঝে পাকা করতে হবে।
৯. কীটপতঙ্গ ,দুর করতে নিয়মিত অনুমোদিত কীটপতঙ্গ নাশক ব্যবহার করতে হবে।
১০. খামারে উকুন , মাছি , মাইট নিয়ন্ত্রন করার পরিকল্পনা থাকতে হবে।
১১. খামারে বন্য পাখি প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
১২. খামারে কুকুর , বিড়াল প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
১৩. খামারের ৩০ মিটারের মধ্যে গরু , ছাগল ইত্যাদি পালন করা যাবে না।
১৪. খামারে কর্মরত কেউ কবুতর , ময়না , টিয়া অন্যান্য পাখি পালন করতে পারবে না।
৫.îশেড পরিষ্কার ও জীবানুমুক্তকরণঃ
১. ব্যবহৃত লিটার আবদ্ধ পাত্র বা স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। বিক্রয়ের আগে অনুমোদিত উপায়ে কম্পোস্ট করতে হবে।
২. লিটার খামারের আশেপাশের জমিতে ছড়ানো যাবে না।
৩. ব্যবহৃত লিটার নতুন / পরিষ্কার লিটারের পাশে রাখা যাবে না।
৪. খামার থেকে লিটার অপসারনের পর রাস্তা থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লিটার পরিষ্কার করতে হবে।
৫. লিটার অপসারনের পর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
৬. লিটার অপসারনের পর শেড ভালভাবে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৭. খামারে ব্যবহৃত ফ্যান , লাইট , মোটর , ব্রুডার ইত্যাদি ভালোভাবে পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
৮. খামারের ভিতর বাহিরে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ভালোভাবে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৯. খামারের ভিতর বাহিরে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি অনুমোদিত জীবানুনাশক দিয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
১০. খামারের সকল খাদ্য ও পানির পাত্র হোভার ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
১১. খামারের পানি সরবরাহ লাইন নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
১২. শেড পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করার পর কমপক্ষে দুই সপ্তাহ খালি রাখতে হবে।
১৩. দুর্গন্ধ,ফাংগাস , পোকা মাকড় ও অন্যান্য জীবানুমুক্ত পরিষ্কার লিটার ব্যবহার করতে হবে।
১৪. খামারে নতুন বাচ্চা উঠানোর আগে সকল খাদ্য ও পানির পাত্র , হোভারসহ শেডের ভিতরের সকল সরঞ্জাম পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
১৫. খামারে কর্মরত কর্মীদেরকে জীবানুনাশকের সঠিক ব্যবহার ও স্প্রে মেশিন ব্যবহার সর্ম্পকে সঠিক ধারনা থাকতে হবে।
১৬. ভ্যাক্সিনেশন যন্ত্রপাতি , ডিবিকার , ডিমের ট্রে ডিমের বক্স ইত্যাদি খামারে প্রবেশের আগেই পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
৬.îব্যক্তিগত ও পোশাক পরিষ্কার ও জীবানুমুক্তকরণঃ
১. গাড়ী খামার থেকে বের হবার পর সমস্ত গাড়ী পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
২. কর্মীদের খামারে প্রবেশের আগেই জুতা ও জামাকাপড় পরিষ্কার করতে হবে।
৩. খামারের বাইরে ব্যবহৃত জুতা জামা কোনক্রমেই খামারের ভিতরে নেওয়া যাবে না।
৪. খামারের প্রতিটি শেড ও ব্রুডারের জন্য পৃথক পৃথক জুতা পোশাক ব্যবহার করতে হবে।
৫. খামারে ব্যবহৃত পোশাক নিয়মিত পরিষ্কার ও আয়রন করতে হবে।
৬. খামারে ব্যবহৃত জুতা ব্যবহারের আগে ও পরে নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
৭. খামারের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করার সময় হাত পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত করতে হবে।
৮. প্রতিটি শেডের সামনে ফুটবাথ থাকবে ও প্রতিদিন পরিষ্কার করে সঠিকভাবে জীবানুনাশক মিশাতে হবে।
৯. দর্শনার্থী শেডে প্রবেশ করবে না ; যদি কখনও জরুরী প্রয়োজন হয় তবে পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত ক্যাপ , এপ্রোন,হ্যান্ডগোব , শেডের জুতা ইত্যাদি পরে ঢুকতে হবে। ব্যবহারের পর আবার সেগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে। ওয়ানটাইম ব্যবহার যোগ্য হলে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
১০. খামারের কর্মীদের সবসময় ফ্লু রোগ ও খাদ্য বাহিত রোগের টিকা নিতে হবে।
১১. খামারে অবশ্যই কর্মীদের জন্য গোসলখানা , পায়খানা , বেসিন , সাবান, জীবানুনাশক থাকতে হবে।
৭.îমুরগির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংঃ
১. মুরগি অসুস্থ হলে বা সমস্যা হলে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।
২. মুরগি অসুস্থ হলে বা মা
No comments:
Post a Comment